সজিনার পাতা, ফুল ও ডাটা নানাবিদ পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি গ্রীস্ম প্রধান অঞ্চলের জনপ্রিয় সবজি। সজিনা আমাদের দেশে বহুল পরিচিত গাছ, এর পাতা, ফুল ও কাঁচা লম্বা ফল বিভিন্ন অঞ্চলব্যাধে নানান রকম সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। ঔষধি উদ্ভিদ সজিনার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওয়েলিফেরা এবং সজিনার ইংরেজি নাম ড্রামষ্টিক যার বাংলা অর্থ ঢোলের লাঠি। সজিনাগাছ এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ। পুষ্টি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সজিনা গাছের পাতা, ফুল ও ডাটায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন সি নিকোটিনিক এসিড, বিটা-ক্যারোটিন, কিউরেকটিন, ক্লোরোজেনিক এসিড, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন, চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেডসহ মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান। সজিনার অসংখ্য পুষ্টিগুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছের পাতা, ফুল ও ডাটা দিয়ে। পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার বছর ধরে রান্না ও নানা চিকিৎসায় এ গাছের পাতা, ফুল ও ডাটা ব্যবহার করে আসছে মানুষ। সজিনা গাছের পাতা শাকের মত রান্না করে খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে ও খাবারে রুচি ফিরে আসে। সজিনা ফুল বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। তবে ইউনানি চিকিৎসক সম্প্রদায়ের মতে, সজিনার ফুল ও ডাটা সর্দিকাশির সমস্যায়, বাতব্যাথা, শরীরে পানি আসলে, লিভারের কার্যকারিতা শক্তি কমে গেলে ও ক্রিমি নাশক ঔষদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুষ্টিভান্ডার সজিনায় প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন যাহা পালং শাকের চেয়ে ৫গুন বেশি শক্তিশালী। সজিনার পাতাকে এন্টি-অকি্রাডেন্টের খনি বলা হয় যা কিনা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী ও ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। তিন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনা পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশে^র বিভিন্ন দেশে সজিনাকে হৃদরোগের চিকিৎসায় অন্যতম প্রতিশেধক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি বৈশি^ক সমস্যা। এই সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ ও পাতা আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সজিনা ডাটা খেলে বেশ উপকারী। মানুষের শরীরে টিউমার নিরাময়ে সজিনা পাতা বেটে প্রলেপ দিলে টিউমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এছাড়া বাতের ব্যথা উপশমে সজিনা গাছের ছাল বেশ কার্যকর। শরীরের কোন স্থানে ব্যথা হলে সজিনার শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে উপশম হয়। কান ব্যথায় শেকড়ের রস কানে দিলে দ্রুত ব্যাথা ভাল হয়ে যায়। মাথা ব্যথা হলে গাছের আঠা কপালে মালিশ করলে ব্যথা সেরে যায়। দাঁতের মাড়ির সুরক্ষায় সজিনা পাতা পানির সঙ্গে ফুটিয়ে প্রতিদিন কুলি করলে উপকার হয়। বদ হজমের কারনে পেটের সমস্যায় সজিনা ডাটার তরকারীর ঝোল খেলে হজমের সহায়ক। মুত্রপাথরী ও হাপানীর জন্য সজিনা ফুলের রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে দ্রুত আরোগ্য হয়। কুকুরের কামড়ে সজিনা পাতা পেশণ করে সঙ্গে রসুন, হলুদ, লবন ও গোল মরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়ে যায়। স্বাদে ও পুষ্টিগুনে ভরা সজিনা এই সবজিটি এদেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে চাষ হয়ে থাকে। বানিজ্যিক ভাবে এর উৎপাদন শুরু হলে বিদেশে রপ্তানী করাও সম্ভব হবে। তার কারন অন্যান্য যে কোন সবজি উৎপাদনের চেয়ে এটি অনেক লাভজনক ও তেমন কোন ঝুঁকি নেই। অপরিসীম ভেষজ মূল্য পারিবারিক আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টিমান মেটাতে সজিনা চাষ করা প্রয়োজন।