নিউজ সোনারগাঁ২৪ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে প্যাডেল রিক্সা। যান্ত্রিকতার এই আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশীশক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স ও সহজলভ্য যানবাহন। পেশি শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে যতটা আরাম আয়েশে কর্ম করা যায় মানুষ এখন সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশির ভাগ ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার চালক। এক্ষেত্রে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিক্সাই বেশি পছন্দের বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তাই পায়ে রিক্সার প্যাডেলের পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারিত চালিত অটো রিক্সার প্রতি। এজন্য হারাতে বসেছে ঐহিত্যবাহী রিক্সা।
তবে বেপরোয়া ব্যাটারি চালিত রিক্সাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বেশি। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পরছে।
এক সময় সোনারগাঁ উপজেলায় আনাচেকানাচে দেখা যেত রিক্সা। রিক্সার প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চালাত শত শত মানুষ। কিন্তু বর্তমান সময়ে গোটা সোনারগাঁয়ে হাতেগোনা কয়েকটি রিক্সা চলে। যেগুলো রিক্সা শহরের মধ্যে চলে সেগুলোর চালকরাও বেশ বয়স্ক। ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা আসার পর পায়ে প্যাডেল রিক্সার জায়গা পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন তারা। বছর তিনেক বছর আগেও সোনারগাঁয়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল রিক্সা। বর্তমান সময়ে উপজেলার পৌরসভা ও প্রত্যান্ত গ্রামে একটা দু’টো রিক্সা দেখা যায়। যে দু’একটি দেখা যায় সেগুলোও হয়ত অল্প দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দিনরাত মিলে একজন রিক্সা চালক মাত্র ১ থেকে দেড়শ’ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়।
রিক্সা চালক ইদ্রিস আলী ওরফে মোস্তফা মিয়া (৫৫) বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা রিক্সা চালাই। এখনো রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছি। গত ৭-৮ বছর আগেও প্রতিদিন ৪ থেকে ৫০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে মাত্র ১ থেকে দেড়শ’ টাকা আয় হয়। আবার কোনো কোনো দিন সেটাও হয় না। মানুষ এখন আর রিক্সায় উঠতে চায় না। আমাদের অটো রিক্সা কেনার টাকা নেই এজন্য বাধ্য হয়ে রিক্সাই চালাতে হয়।’
হাবিবপুর এলাকার রিক্সা চালক বদিউদ্দিন (৪২) বলেন, ‘এখন মানুষ অলস হয়েছে। মানুষের সময় কমে গেছে। কেউ রিক্সা চড়ে দূরে কথাও যেতে চায় না। আমরা দিনরাত যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। দীর্ঘদিন ধরে রিক্সা চালিয়ে আসতেছি। এটা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় যাব তারও উপায় নেই।’
এ বিষয়ে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সাংবাদিক হাজী মোঃ মহসিন জানান, ‘ছোটকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রিক্সাতেই ঘুরে বেড়াতাম। আধুনিকতার যুগে মানুষের মধ্যে বর্তমানে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু বর্তমানে শহরে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা চলাচল করে তাতে এই উপজেলা থেকে রিক্সা বিলুপ্তি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’