নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: সোনারগাঁয়ে এবারও লিচুর ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। টানা তৃতীয় বছরের মতো অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে এই বিপর্যয় ঘটেছে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় চাষিরা জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে লিচুর আকার ছোট হচ্ছে, ফলে অপরিপক্ব অবস্থায়ই পেকে যাচ্ছে। এতে স্বাদ ও মিষ্টির ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে গাছে পোকার আক্রমণ বেড়েছে, পাশাপাশি কাক ও বাদুড়ের উপদ্রবে রাতদিন লিচু খেয়ে নষ্ট করছে।
চাষিদের অভিযোগ, সোনারগাঁয়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর কালো ধোঁয়া পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যা লিচুর ফলনেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বর্তমানে সোনারগাঁয়ে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি—এই পাঁচ প্রজাতির লিচুর চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে কদমী লিচু সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক চাষি অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে এখন পুরোপুরি লিচু চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৫০০টি ছোট-বড় লিচুর বাগান রয়েছে, যার বেশিরভাগই কদমী জাতের। প্রতি বছর একটি বাগান ৪-৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও, এবার তা ১-২ লাখ টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে না। বর্তমানে কদমী লিচু প্রতি শত (১০০টি) বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, আর পাতি লিচু ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গামতলী গ্রামের লিচু চাষি তাইজুল ইসলাম বলেন, “খরার কারণে গত কয়েক বছর ধরে লিচুর ফলন ভালো হচ্ছে না। গত বছর যে বাগান ২.৫ লাখে বিক্রি হয়েছিল, এবার সেটা ১ লাখ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না।”
সাহাপুর এলাকার লিচু ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, বাদশা ও মাসুদ বলেন, “আমরা ফলন না দেখেই বাগান কিনে ফেলি। ভাগ্যের উপর নির্ভর করেই লিচু ব্যবসা করি। কিন্তু টানা কয়েক বছর ধরে ক্ষতিই গুনছি।”
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, “সোনারগাঁয়ের আবহাওয়া সাধারণত লিচু চাষের জন্য উপযোগী। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিলেও প্রকৃতির বিপরীতে লড়াই করে লাভ হচ্ছে না।”
উপজেলার পৌরসভার সর্দার বাড়ি, পানাম, অর্জুন্দি, সাহাপুর, দত্তপাড়া, কৃষ্ণপুরা, ভট্টপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় উন্নত মানের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় ফলন বিপর্যয়ের প্রভাব বেশি দেখা দিয়েছে।
চাষিরা এ পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা ও ফলন ধরে রাখতে বিশেষ উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন।