নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মারীপাড়া এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মিরেরবাগ গ্রামের বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রী পিয়াঙ্কা।
পরিবারের দাবি: পরিকল্পিত হত্যা
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত বাবুল মিয়ার বোন মেহেরুন নেছা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ মিয়া তাদের হয়রানি করছিলেন। বাবুল মিয়াকে একটি এনজিও থেকে ঋণ তুলে দেওয়ার কথা বলে তার পৈত্রিক সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে লিখে নেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছিল।
পুলিশি হয়রানি ও রহস্যজনক দুর্ঘটনা
সোমবার সকালে বাবুল মিয়া পুকুর থেকে মাছ ধরতে গেলে পলাশ মিয়া তালতলা ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এনে তাকে ধাওয়া করে। গ্রেপ্তার এড়াতে বাবুল মিয়া সারাদিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং জমি সংক্রান্ত বিরোধ এড়াতে অন্যত্র বাসা ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সোমবার রাত ১০টার দিকে স্ত্রী পিয়াঙ্কাকে নিয়ে মালপত্রসহ ভাড়া বাসায় যাওয়ার পথে অজ্ঞাত এক পিকআপ ভ্যান তাদের বহনকারী ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রী মারা যান।
পলাশ মিয়ার রহস্যজনক ভূমিকা
বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, তাদের মৃত্যুর পর পলাশ মিয়া একাই ধর্মীয় রীতিনীতিসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের এতে অংশ নিতে দিচ্ছেন না। এতে তার ভূমিকা আরও সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
এ বিষয়ে তালতলা বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফেরদৌস ইসলাম জানান, এটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়েছিল কি না, তা তিনি নিশ্চিত নন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পলাশ মিয়ার অবস্থান ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
নিহত বাবুলের ভাতিজা হানিফ মিয়া বলেন, “আমার চাচাকে সকালেই পুলিশ হয়রানি করেছে, আর রাতে তিনি ও চাচি পিকআপ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এর আসল রহস্য উদঘাটন করা দরকার।”
এদিকে, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মোতালেব ভূঁইয়া জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন। তবে তাদের সঙ্গে পলাশ মিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছেন।
ঘটনার পর থেকে পলাশ মিয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে এবং তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিবারের দাবি: সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনাকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন। তারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।