নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব মো. সিরাজুল ইসলাম মাস্টার আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আজ রাত ১২:৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সোনারগাঁ উপজেলাসহ শিক্ষাঙ্গন ও মুক্তিযোদ্ধা মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে, আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা সনমান্দি হাসান খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৫২ সালের ২৬ মে সোনারগাঁও উপজেলার সনমান্দী গ্রামের সম্ভ্রান্ত মোল্লা পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সিরাজুল ইসলাম ছিলেন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সংগঠক। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ২নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এ টি এম হায়দারের অনুমোদনে গঠিত ‘সনমান্দী মুক্তিযোদ্ধা উপ-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’-এর ক্যাম্প-ইন-চার্জ হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সোনারগাঁয়ের চিলারবাগ, সনমান্দী, লাঙলবন্দসহ বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
কর্মজীবন ও অবদান
সিরাজুল ইসলাম মাস্টার একজন আদর্শবান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তাঁর যোগদানের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসে এবং বিদ্যালয়টি উপজেলার অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি তিনবার সোনারগাঁও উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সনমান্দী হাছান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি, সনমান্দী হাফেজিয়া মাদ্রাসার সেক্রেটারি, সনমান্দী বড় ঈদগাহ ময়দানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহকারী জেলা কমান্ডার (ত্রাণ ও পুনর্বাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিজীবন
সিরাজুল ইসলাম মাস্টার ব্যক্তিজীবনে দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন, অন্য সন্তানরাও উচ্চশিক্ষা শেষে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত রয়েছেন।
শেষকৃত্য
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম মাস্টারের নামাজে জানাজা আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা তাঁর নিজ গ্রাম সনমান্দী হাসান খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাঙ্গন ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দেশের জন্য তাঁর অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।