নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: দীর্ঘ ২৫ বছর কুয়েতে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হলেন মো. আশরাফুল। চলতি মাসের ২ তারিখ রাতে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরিবারের দাবি, আশরাফুল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিলেন না, এমনকি কোনো মিছিল-মিটিংয়েও অংশ নেননি। শুধু পরিবারের সুখের জন্য জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি প্রবাসে কাটিয়েছেন। অথচ একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাকে একটি হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
কোটা বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা মামলায় নাম তার নাম জুড়ে দেয়া হয় পরে দেশে আসলে ডিবি পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই কাঁচপুরে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের গুলিতে ইব্রাহিম (১২) নামে এক ছাত্র নিহত হয়। নিহতের বাবা এই ঘটনায় মামলা দায়ের করেন, যেখানে আশরাফুলকে ২১০ নম্বর আসামি করা হয়।
কিন্তু পরিবারের দাবি, আশরাফুল ২৫ জুলাই দেশে ফিরেছেন এবং ২ মার্চ গ্রেপ্তার হয়েছেন। অর্থাৎ, যে ঘটনার সময় তিনি দেশে ছিলেনই না, সেই ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
পরিবারের দাবি: পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার
আশরাফুলের মেয়ে উসমিয়া বলেন, “আমার বাবা সারাজীবন কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। আমাদের মানুষ করার জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু দেশে ফিরে আমাদের কাছে থাকতে পারেননি, তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সনমান্দি ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আবুল হোসেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাশেম রতন পরিকল্পিতভাবে এই মামলা দিয়েছে।”
আশরাফুলের স্ত্রী আমেনা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলে জড়িত ছিলেন না। অথচ তার ছবি এডিট করে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এসবের মূল হোতা লেদামদি গ্রামের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা প্রবাসী আবুল হাশেম রতন, তার ভাই জাতীয় পার্টির নেতা আবুল হোসেন ও বর্তমান ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম।”
বিএনপি নেতার অভিযোগ: জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ফাঁসানো হয়েছে
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা সামছুল হক বলেন, “আশরাফুল কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবে তার জমি থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাটি কেটে নিয়েছে জাতীয় পার্টির নেতা আবুল হোসেন, ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাশেম রতন। এই বিরোধের জেরেই তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এর আগেও আবুল মেম্বার ও আবুল হাশেম কবির নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা হত্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছিল। আশরাফুলও একই ষড়যন্ত্রের শিকার।”
অভিযুক্তদের বক্তব্য
এই অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলাম মেম্বার বলেন, “গত ইউপি নির্বাচনে আমার বিরোধীরা পরাজিত হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। এসব ভিত্তিহীন।”
অন্যদিকে, কারাবন্দি কবির হোসেনের মা বলেন, “সাইফুল মেম্বার ও আবুল হাশেম রতন আমাদের পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করছে। তারা যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন সেই দলের নেতা হয়ে যায়। এখন তারা বিএনপির বড় নেতা! আমার ছেলেকে ছাড়াতে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে। টাকা দিলে আমাদের আর জ্বালাবে না বলে জানিয়েছে। আমরা খুবই অসহায়।”
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তারেক আল মেহেদি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে বিস্তারিত ব্যবস্থা নেয়া হবে।